“পাটা-পুতোয় ঘষাঘষি মরিচ-পিয়াজের জীবন শেষ” প্রবাদটি এতকাল মানুষের মুখে মুখে থাকলেও এবার তার বাস্তবে দেখা মিললো। পুত্রবধু এবং শাশুড়ীর মায়া মমতা ভালবাসার কর্তৃত্বের যাতাকাষ্ঠে টিকতে না পেরে অতিষ্ট হয়ে শত অভিমান বুকে নিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন চট্টগ্রাম র্যা ব-৭ এর সিনিয়র এএসপি পলাশ সাহা। গত বুধবার (৭মে) সকাল ১০ টায় নিজ কার্যালয়ে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন তিনি। সে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার তারাশী গ্রামের মৃত বিনয় কৃষ্ণ সাহার কনিষ্ঠ পুত্র। শিশুকালে পিতৃ হারা পলাশকে অতি কষ্টে কোলে পিঠে করে মানুষ করে গড়ে তোলেন মা আরতী সাহা। তিন ভাই-বোনের ছোট পলাশ @হয়ে ওঠেন একজন মেধাবী ছাত্র। তার মেধা এবং মহানুভবতার সুনাম অল্পতেই ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এলাকার মানুষের কাছে সে পরিচিতি পায় একজন নয়নমনি হিসেবে। এমন তথ্যই বেরিয়ে এসেছে গনমাধ্যম কর্মিদের অনুসন্ধানে। তার এই মেধার পিছনে রয়েছে জন্মদাতা মা এর মহান ত্যাগ ও অক্লান্ত পরিশ্রম। তাই বড় হয়ে মার এই অবদানের কথা ভুলতে চায়নি পলাশ। চাকুরী জীবনেও কর্মস্থলে বসবাস করতেন মাকে সঙ্গে নিয়ে। কারন মা ই ছিলেন তার পৃথিবীর সব। মেধাবী এই পুলিশ অফিসার স্বর্গতুল্য মায়ের অসম্মতিতে প্রায় তিন বছর পূর্বে বিয়ে করেন ফরিদপুর চৌধুরী পাড়ার সুষ্মিতা সাহা নামক অপেক্ষাকৃত দরিদ্র পরিবারের এক মেয়েকে। বিয়ের কিছুদিন পর থেকে স্বামী-স্ত্রীর সুসম্পর্ককে মেনে নিতে পারছিলেন না সুশ্মিতার শাশুড়ী। তাই মা এবং স্ত্রী দুজনেই কর্তৃত্ব দেখাতো পলাশের উপর। এক দিকে সর্ব ক্ষেত্রে বিবাহিত ছেলেকে শ্বাসন ও সোহাগ করতেন মা, অন্য দিকে স্ত্রী পেতে চাইতেন শত ভাগ স্বামীর অধিকার। এ নিয়ে প্রতিনিয়তই তিন সদস্য বিশিষ্ট সংসারে লেগে থাকতো অশান্তি কলহ, এমনটাই জানা গেছে সূত্র মতে। পলাশের আত্মহননের পর বৌ-শাশুড়ীর এ সম্পর্কিত পরষ্পর বিরোধী বক্তব্যের একাধিক ভিডিও ও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পক্ষে বিপক্ষে ওঠে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার ঝড়। মা-স্ত্রী-কর্মস্থল এই তিনের টানাপোড়নে অগ্নিকুন্ডে পরিনত হয় পলাশের জীবন। সিদ্ধান্ত নেন সকলেকে ভালো রেখে সরে পড়বেন নশ্বার এই ভুবন থেকে। যেই কথা সেই কাজ। কাহাকেও না জানিয়ে সকলকে কাঁদিয়ে একাকিত্বে পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। রেখে গেলেন নানান স্মৃতি সহ এক টুকরো চিরকুট। হেরে গেলেন বৌ-শাশুড়ী স্বজন সহ পুরো পৃথিবী। জিতে গেলেন পলাশ। দেশ হারালো একজন চৌকস পুলিশ অফিসার।