রুহিয়ায় বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়ির গেটে প্রেমিকার ৫ দিন ধরে অনশনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে প্রেমিকার অনশনের খবর পেয়ে প্রেমিকের পরিবার বাড়ির গেটে তালা লাগিয়ে প্রেমিকসহ আত্মগোপনে চলে গেছে। স্থানীয় প্রশাসন অদৃশ্য কারণে নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে অনেকেরই অভিযোগ।
জানা গেছে, রুহিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের এমপি মোড়ের ইতালি প্রবাসি অতুল দাসের ছেলে অনিক দাস এর সাথে আখানগর ইউনিয়নের খ্রীষ্টান পাড়া এলাকার রজেন দাসের কন্যা ববিতা দাস এর ১০ বছর পূর্বে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। উক্ত প্রেমের জেরে প্রেমিক অনিক দাস ২০২০ সালে প্রেমিকা ববিতা দাসের বাড়িতে বিয়ের দাবিতে অবস্থান নেয়। পরে ববিতা দাস ও অনিক দাস কোর্টএ এফিডেভিট এর মাধ্যমে বিয়ের কাজ সম্পাদন করে। কিন্তু বেরসিক অনিক দাসের পরিবার ৩ দিন এর মাথায় বিয়েটাকে স্বীকৃতি দিবে বলে অনিক দাসকে বাড়িতে এনে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে তার স্ত্রীকে তালাক দেয়ায়। এর কিছুদিন পরে ববিতা দাসের পরিবার ববিতা দাসকে নাটোরের বড়াই গ্রামের বাবু দাস এর সাথে বিয়ে দেয়। ইতোমধ্যে অনিক দাসের পিতা ইতালি প্রবাসি অতুল দাস অনিককে ইতালিতে চাকুরি নিয়ে পাঠিয়ে দেয়। দেখতে দেখতে ৩ বছর গড়িয়ে যায়।
ইতালিতে গমনের পর থেকে অনিক দাস ববিতা দাসের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখে এবং ববিতা দাসের স্বামী বাবু দাসের মোবাইল ফোনে ববিতা দাসকে তালাক দেয়ার জন্য হুমকি দিতে থাকে। ববিতা দাসের সংসারে ভাঙ্গনের সুর বেজে উঠে। এমতাবস্তায় ২০২১ সালে ববিতা দাস তার স্বামী বাবু দাসকে তালাক দেয়। তার পর থেকে ববিতা দাস ঢাকায় বসবাস করে। তার যাবতীয় খরচের টাকা অনিক দাস ইতালি থেকে নিয়মিত পাঠিয়ে দেয়। এদিকে অনিকের পরিবার অনিককে দেশে এসে বিয়ে করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। অনিক দাস তার পরিবারকে সাফ জানিয়ে দেয় সে তার প্রেমিকা ববিতা দাসকে ছাড়া অন্যত্র বিয়ে করবে না। অনিক দাসের পরিবারের লোকজন বেকায়দায় পরে যায়। এমতাবস্থায় ছেলেকে দেশে ফিরিয়ে আনার স্বার্থে অনিক দাসের পরিবার ববিতা দাসের পরিবারের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পান কাটা (দেন মোহর) এর কাজ সম্পন্ন করলে অনিক তার পরিবারের প্রতি খুশি হয়ে ববিতা দাসকে পাওয়ার উদ্দেশ্যে দেশে ফিরে আসে। কিন্তু বিধি বাম।
অনিকের দেশে আসার খবর শুনে ববিতা দাস অনিক দাসের সাথে দেখা করার জন্য তার বাড়িতে চলে আসে। সুযোগ বুঝে অনিকের পরিবারের লোকজন বাড়ির গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে অনিককে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে সকলেই সটকে পরে। ফলে ৫ দিন ধরে অনশন করেও মেয়েটি এখন পর্যন্ত কোন সুরাহা পায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ববিতা দাস বলেন, অনিক আমাকে বলেছে তুমি যদি ১০ সন্তানের জননী হও তবুও তুমি আমার। আমাকে অনিক নিজের মুখে বলুক আমি তোমাকে চাই না, তাহলে আমি আমার নিজ ঠিকানায় ফিরে যাব। নচেৎ এখানেই আমি আত্মহত্যা করবো।
এ বিষয়ে অনিক দাস পরিবারসহ আত্মগোপন করায় তার স্বাক্ষাৎ কার নেয়া সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে রুহিয়া পশ্চিম ইউপি চেয়ারম্যান অনিল কুমার সেন বলেন, মেয়েটি অনশনে আছে এটি আমি জানি কিন্তু উভয় পক্ষই নাছর বান্দা। মেয়েটি চায় বিয়ে করতে আর ছেলের পরিবার বিয়ে করবে না।
রুহিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ সোহেল রানা জানান, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না, তবে কতিপয় সাংবাদিকের স্ট্যাটাস থেকে বিষয়টি আমি জেনেছি।
রুহিয়া ক্যাথলিক মিশনের ধর্ম যাজক ফাদার এন্ট্যানি সেন বলেন, মেয়েটি যদি খ্রিষ্টান এসোসিয়েশন ট্রাইবুনাল এ অভিযোগ দেয় তাহলে ন্যায় বিচার পেতে পারে, তবে মোটামোটি ৩/৪ বছর লেগে যেতে পারে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি রুহিয়া থানার ওসির সাথে কথা বলেছি। তিনি আমাকে জানিয়েছেন আগামী কালকের মধ্যে বিষয়টি সমাধান হবে। এছাড়াও তিনি এই প্রতিবেদকের মুঠোফোনের মাধ্যমে ববিতা দাসের সাথে কথা বলে তাকে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেন।