কুড়িগ্রাম জেলায় সর্বমোট নয়টি উপজেলা রয়েছে । চর রাজিবপুর ও রৌমারী উপজেলা দুটি ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা কুড়িগ্রামের অন্যান্য উপজেলা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। সাধারণত বর্ষা মৌসুমে রাজিবপুর নদী বন্দর থেকে চিলমারী নৌ বন্দর পর্যন্ত ৩ থেকে ৪ ঘন্টা যেতে সময় লাগে । কিন্তু শীত ও শুষ্ক মৌসুমে নাব্যতা সংকটে, গভীর কুয়াশা, নদীর রেখা পরিবর্তনের কারণে চিলমারী নৌ বন্দর পর্যন্ত পৌঁছতে ৫ থেকে ৮ ঘন্টা পর্যন্ত লেগে যায় । কখনো কুয়াশার কারণে ভুল পথে চলতে থাকে নৌকা । শুষ্ক মৌসুমে নৌকা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে বাধাগ্রস্ত হয় । একটি উপজেলা কতটা উন্নত তার একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা । কুড়িগ্রাম দেশে দারিদ্র্যের শীর্ষ জেলা । দেশের সবচেয়ে দরিদ্র উপজেলা হচ্ছে চর রাজিবপুর, যা কুড়িগ্রাম জেলার অন্তর্ভুক্ত ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলায় দেশের সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষের বসবাস। দারিদ্র্যের হার ৭৯ দশমিক ৮ । উপজেলাটির জনসংখ্যা প্রায় ৮৫ হাজার। অন্তত ৩০-৪০ টি চর রয়েছে। এসব চরের বাসিন্দারের বেশিরভাগ হতদরিদ্র । এমন কিছু পরিবার রয়েছে যারা ২০ থেকে ৩০ বারের অধিক নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে । অন্যদিকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে রৌমারী উপজেলা। এ উপজেলায় দারিদ্র্যের হার ৭৬ দশমিক ৪। কুড়িগ্রাম শহরের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ক্লান্তিহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয় এ দুই উপজেলার চার লক্ষাধিক মানুষকে। কেবল যোগাযোগ ব্যবস্থার জটিলতার কারণে জরুরী রোগি ও প্রসূতিদের উপযুক্ত চিকিৎসা মেলে না। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু স্বাধীনতার মুক্তাঞ্চলখ্যাত রৌমারী ও চর রাজিবপুর উপজেলা উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না।
নৌ-রুটে পণ্য পরিবহন ও যাত্রী পারাপারের ব্যাপক ভোগান্তি । ঝুঁকি নিয়ে চলছে নৌ-রুটে নৌ-যান চলাচল । এতে এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা, মুমূর্ষ রোগী, মামলার আসামি, চাকুরীজীবী ও কৃষকেরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । স্বাধীনতার ৫২ বছর হলেও জেলা সদরের সাথে সড়ক পথে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন কারণে এ নৌ-রুট গুলোতে জনসাধারণের জন্য স্পিডবোট কিংবা অন্যান্য নৌ-রুটের যানবাহনের ব্যবস্থা পর্যন্ত করা হয়নি ।
এলাকাবাসীর মতে, জেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্নতা, ভঙ্গুর যোগাযোগ ব্যবস্থা ও নদীভাঙন ও বেকারত্ব দিন দিন বেড়েই চলেছে। কুড়িগ্রাম জেলা সদর থেকে রৌমারী ও চর রাজিবপুর উপজেলার দূরত্ব ৬৩ কিলোমিটারের বেশি। এর মধ্যে ২৬ কিলোমিটার আঁকাবাঁকা নদীপথ।
বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রভাষক আব্দুস সবুর ফারুকী জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় অঞ্চলটি ছিল সর্বদা মুক্ত । পাক হানাদার বাহিনীর পদচারনা এখানে না থাকায় মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের কোন দোষরাও ছিল না । সোজা কথায় এখানে রাজাকার আল-বদর দালালদের জন্ম হয়নি । এই এলাকার মানুষের প্রাণের দাবি একটি মাত্র সেতু । যার মাধ্যমে সমৃদ্ধি হবে এলাকার অর্থনৈতিক জীবন যাত্রা । উত্তরাঞ্চলের সাথে যোগাযোগ স্থাপন হবে একটি সেতুর মাধ্যমে । অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সাথে বেকারত্ব হ্রাস পাবে ।