শশুরবাড়ি যাওয়ার পথে মাওয়া ঘাটে স্বামীর পরিচিতো ৪ জন গৃহবধূকে ধর্ষন: গ্রেফতার -৩
এস এম জাহিদঃ মুন্সিগঞ্জের মাওয়াঘাট থেকে ফিরে।।
ভাঙ্গা উপজেলার শেষ প্রান্ত এবং জাজিরা পয়েন্টে বিপরীতে সাবেক মাওয়া ফেরিঘাটটি মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার পুরাতন মাওয়া ফেরিঘাট। এপাড় মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ি ঘাট। দুটি ফেরীঘাট এবং জনাকীর্ণ লঞ্চঘাট একেবারেই পরিত্যক্ত। অপরাধীদের এখন অভ্যায়রন্য। থেমে নেই কোন অপরাধ। মাদক চোরাচালান, জুয়াখেলা এবং নারীর সম্মানহানির ঘটছে অহরহ। লোক লজ্জা আর সামাজিক ভয়ে কেউ কেউ মুখ না খুললেও পাপের মাত্রাটা যখন একেবারেই ভারী হয়ে যায় ঠিক তখন কোন ভুক্তভোগী মুখ খুলে ফেলেন। তেমনি জনৈক গৃহবধূ (২২) ধর্ষিত হয়ে মুখ খুললেন। গত রোববার ওই নারী শ্বশুরবাড়ি মাওয়া পুরাতন ঘাট যাওয়ার উদ্দেশে ট্রলারে উঠেছিলেন। সেখানেই সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন তিনি। ধর্ষিত ঐ নারী এর আগে ফরিদপুর জেলার সদরপুর চন্দ্রপাড়া দরবার শরীফ থেকে হজুরপাকে মাজার জিয়ারত করে ট্রলার যোগে মুন্সিগঞ্জে ফিরেন এবং ওখান থেকে শশুর বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার পথে এই ঘটনাটি বলে জানাগেছে। এ ঘটনায় তিন তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার মাঝির কান্তি এলাকার ইয়ামিন মুন্সী (১৯), মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের কাওলার চরের জামাল মোল্লা (২৩) ও হাওলাদারকান্দি এলাকার জব্বার শেখ (১৮)। গত সোমবার ওই গৃহবধূ পদ্মা সেতু (উত্তর) থানায় লিখিত অভিযোগ করলে মামলা রেকর্ড হয় ।এরপর পুলিশ ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতে ধর্ষণের অভিযোগ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির পর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মামলা এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত রোববার ওই নারী শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার জন্য মাওয়া পুরোনো ফেরিঘাটের ট্রলারঘাটে আসেন। সেখানে তিনি ট্রলারের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ওই সময় তাঁর স্বামীর পূর্বপরিচিত আবু বকর সিদ্দিক ও জামাল মোল্লা ঘাট এলাকায় আসেন। তাঁরা ওই নারীকে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে নিজেদের পরিচালিত ট্রলারে উঠতে বলেন। সিদ্দিক পরিচিত হওয়ায় ট্রলারে ওঠেন ওই নারী। ওই সময় অভিযুক্ত ইয়ামিন ও জব্বার নামের আরও দুজন ট্রলারটিতে ওঠেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ট্রলারটি পদ্মা নদীর ডোমারখালী চরে পৌঁছায়। সেখানে ওই চার জন গৃহবধূকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করেন। শুক্রবার (২১ শে ফেব্রুয়ারি)। চন্দ্রপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জকে অবগত করলে তারা জানান, যেহেতু ঘটনাটি আমার এরিয়ার মধ্যে পড়েনি সেহেতু আমলে নেয়া হয়নি। তবে ঘটনাটি সত্যি বলে স্বীকার করছেন।
তবে মুন্সিগঞ্জের জেলা পুলিশের নির্ভরযোগ্য সূত্রটি স্বীকার করে বলেন, বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টায় মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশ এক সংবাদ সম্মেলনও করা হয়েছে।
পদ্মা সেতু উত্তর থানার ওসি জাকির হোসেন বলেন, গত রোববার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ওই গৃহবধূ তার স্বামীসহ পদ্মা সেতু (উত্তর) থানায় হাজির হয়ে চারজন যুবক কর্তৃক সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মর্মে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে থানা পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। ঘটনার সত্যতা যাচাই করে মামলা করা হয় এবং আসামি গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান শুরু করে। এ ঘটনায় পদ্মা সেতু উত্তর থানা পুলিশ
পরদিন সোমবার পদ্মা নদীর পাড় থেকে আসামি জামাল মোল্লাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার দেওয়া জবানবন্দির ভিত্তিতে অপর দুই আসামি ইয়ামিন ও জব্বারকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শামসুল আলম সরকার বলেন, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ ও আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আসামিরা জানান, ভুক্তভোগী গৃহবধূ পুরাতন মাওয়া ফেরিঘাট থেকে তার স্বামীর বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশে ঘাটে নৌকার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় আসামি আবু বকর সিদ্দিক ও জামাল মোল্লা তাকে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে ট্রলারে নেন। পথিমধ্যে অপর দুই আসামি ইয়ামিন ও জব্বারও ট্রলারে ওঠেন। আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নদীপথে নির্জনতার সুযোগে ভুক্তভোগীকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে জনমানবহীন পদ্মা নদীর ডোমরাখালী চরে নিয়ে চারজন মিলে ধর্ষণ করেন। পরবর্তীতে আসামিরা মাওয়া পুরাতন কোস্টগার্ড স্টেশনের পাশে ভুক্তভোগী নারীকে রাত আনুমানিক ৯টার দিকে ট্রলার থেকে নামিয়ে কাউকে কিছু না বলার জন্য হুমকি দিয়ে দ্রুত চলে যান।
মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপার আরও জানান, অভিযুক্ত তিনজনই আদালতে অপরাধ স্বীকার করে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ঘটনায় ব্যবহৃত নৌকা এবং আলামত হিসেবে একটি জিও ব্যাগ জব্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি ভুক্তভোগীর ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়েছে এবং তার ব্যবহৃত জামা-কাপড় জব্দ করা হয়েছে।একই সঙ্গে ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলমান এবং পলাতক অন্য আসামিকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে।