ঠাকুরগাঁওয়ে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে ডাম ফাউন্ডেশন ফর ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট রুহিয়া শাখার মাঠ কর্মী (জেএফও) শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে ঋণের বই, আত্মসাৎ করা অর্থ ফেরত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে ভুক্তভোগীরা।
শনিবার (০৮ মার্চ) বিকেলে সদরের রুহিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সংলগ্ন ডাম ফাউন্ডেশন ফর ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অফিসের সামনে মানববন্ধন শুরু করেন ভুক্তভোগীরা। প্রথমে ২০/৩০ জন ভুক্তভোগী সেখানে জড়ো হন। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন রুহিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুলতান রহমান।
এ সময় ঋণ প্রত্যাশীরা সংবাদকর্মীদের জানান ডাম ফাউন্ডেশন ফর ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট রুহিয়া শাখার মাঠকর্মী শাহাদাত হোসেনের ৩৫৯জন অসহায় মানুষের কাছ থেকে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা নিয়ে পালিয়েছে।
উপস্থিত ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ১৫ হাজার টাকা সঞ্চয় করলে ১ লাখ টাকার ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ঢোলারহাট, রুহিয়া পশ্চিম, ১ নং রুহিয়া ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন এলাকার ৩৫০জন মানুষের কাছ থেকে ৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে নিয়েছে তিনি। যাঁদের কাছ ঋণের কথা বলে আগাম টাকা নিয়েছেন। তাঁদের চলতি মাসের ১ থেকে ৫ তারিখের মধ্যে ১ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা ছিল।
ব্যারিস্টার এলাকার ভুক্তভোগী হাসান আলী বলেন, ঋণের জন্য ১৫ হাজার টাকা সঞ্চয় নিয়েছে। আজ দিব, কাল দিব, অফিসে টাকা নাই বিভিন্ন অজুহাতে তিনি একমাস ঘুরিয়েছেন। জমাকৃত টাকা ফেরত ও প্রতারক শাহাদাতের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
আকচা ইউনিয়ন পরিষদের বাসিন্দা বিপ্লব বলেন, প্রথমে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি। তৃতীয় কিস্তির পরে ১০০০ টাকা কম ৪ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। ঐদিনই তিনি সঞ্চয়ের বইটি আসেন। কিস্তি আমি দিতেই থাকি, প্রতিমাসে বইটি ও তার কাছে চাই। তিনি বলেন বইয়ের দরকার নাই। আপনার কিস্তি তো আমি পোস্টিং দিচ্ছি। এখন উনি নাকি নেই, চলে গেছে। উনার বদলে আরেকজন আমার কাছে কিস্তি চায়। আমি তাকে বলি আমার ঋণ শেষের দিকে, কত টাকা পাবেন বই দেখে দিয়ে দিব। বই বাহির করলে দেখা যায়, তিনি আমার একটি কিস্তিও পোস্টিং করেননি। উল্টো আরো আমার ৫ হাজার টাকা সঞ্চয় উত্তোলন দেখানো হয়েছে। আমি গরিব দেখেই ঋণ নিয়েছি। ঋণ পরিশোধ হলে এইসময় আরো ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিতাম। এখন দেখি আমার কিস্তিই দেয়নি, উল্টো আরো সঞ্চয় একটাকা তুলেছে। এই টাকা এখন আমি কার কাছ থেকে পাবো।
রুহিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের আলেয়া বেগম বলেন, আমার স্বামী নেই। ছোট একটা মেয়ে আছে। তার ভবিষ্যতের জন্যেই দেড় বছর হয়েছে ডিপিএস খুলেছি। মাদ্রাসায় রান্নার কাজ করে ডিপিএসের টাকা চালাই। কিছুদিন আগে অফিসের দরকার বলে আমার বইটি নিয়ে যায়। টাকা দিতেই থাকি কিন্তু তিনি আমাকে বই ফেরত দেয়নি। এখন শুনি তিনি পালিয়েছেন। আমার এখন কি অবস্থা হবে।
ভ্যান্ডারপাড়া গ্রামের আকতারা বেগম বলেন, ৭০০০ টাকা ঋণ বাকি ছিল। সেটি পরিশোধ করে, ৫০০০ টাকার সঞ্চয় সহ ১২০০০ টাকা দিয়েছি। বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে আমাকে দিনের পর দিন ঘুরাতে থাকে। আমি ভেবেছিলাম আমাকে ঋণ দিবে না। কিন্তু আমার তো টাকা লাগবেই জমি কিনেছি টাকা কিছু বাকি আছে। আমার ঋণ লাগবেই। একমাস হয়ে গেলে অফিসে গিয়ে দেখি, আমার ঋণ ইনফর্মই হয়নি। ঋণ পরিশোধও হয়নি। ম্যানেজার এখন বলতেছে আপনার তো ঋণ পরিশোধই হয়নি। জমা কোন টাকাও নেই। আপনাকে কিভাবে ঋণ দিবো। উনি ধরা পড়লে কি করে দেখা যাবে।
ডাম ফাউন্ডেশন ফর ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট রুহিয়া শাখার ব্যবস্থাপক সাবুল হোসেন জানান, প্রতারক, বিশ্বাসঘাতক শাহাদাত হোসেনের কারণে আমাদেরকে লাঞ্ছনা শিকার হতে হচ্ছে। পুলিশের মানবিক সহযোগিতার কারণে এখানে থাকতে পারছি। অনেক জায়গায় আমাদের গাড়ি আটকে দিচ্ছে ভুক্তভোগীরা। তবে, প্রতারিত মাঠকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছি, রুহিয়া থানা পুলিশ ইতিমধ্যে শাহাদাতকে আটক করেছে। এখন হয়তো কিছু একটা সমাধান হবে।