গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ডাকাতিসহ হত্যা মামলায় তিনজন আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে গোপালগঞ্জ ও কোটালীপাড়া থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃত ওই তিন আসামী হলো, কোটালীপাড়া উপজেলায় কুশলা ইউনিয়নের চৌরখুলি গ্রামের আতা শেখের ছেলে সামিউল শেখ (৩৫) ও রহম আলীর ভূইয়ার ছেলে শওকত ভূইয়া (৩৩) একই উপজেলার হিরণ ইউনিয়নের বংকুরা গ্রামের সোহরাব খানের ছেলে মোরশেদ খান (৪১)। এদের মধ্যে সামিউল শেখ ও মো. মোরশেদ খান শুক্রবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। অপর আসামী শওকত ভূইয়াকে আজ শনি বার বিকালে আদালতে হাজির করা হয়েছে।
এদিকে আজ শনিবার বিকাল ৩ টায় গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
পুলিশ সুপার বলেন, নিহত পিয়াসের বাবা পল মজুমদার পেশায় একজন দন্তচিকিৎসক এবং তাঁর মা অনিতা বৈদ্য নার্সের চাকুরি করেন। ঘটনার দিন ( ১১মার্চ) সকালে ওই দম্পতি প্রতিদিনের ন্যায় নিজেদের কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যান। তখন বাড়িতে একাই ছিলেন পিয়াস। দুপুরে পল মজুমদার বাড়িতে গিয়ে তাঁর ছেলে পিয়াসকে হাত–পা বাঁধা ও মুখের মধ্যে ওড়না ঢোকানো অবস্থায় খাটের ওপর দেখতে পান। এ সময় বাসার আলমারিসহ আসবাব ভাঙাচোরা ও এলোমেলো অবস্থায় ছিলো। তাঁর চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন সেখানে গিয়ে পিয়াসকে উদ্ধার করেন। পরে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
এ সময় পল মজুমদারের বাসার আলমারিতে থাকা ১ লাখ ৯ হাজার টাকা ও একটি রুপার নূপুর লুটে নেয় ডাকাত সদস্যরা। ওই দিন সন্ধ্যার পর নিহত পিয়াস মজুমদারের বাবা পল মজুমদার নিজে বাদী হয়ে বাংলাদেশ দন্ডবিধির ৩৯৬ ও ৩০২ ধারা উল্লেখ করে অজ্ঞাতদের আসামী করে কোটালীপাড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নম্বার -১৩)।
এঘটনায় জড়িত থাকায় বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ৩ টায় বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলা কামারগাতি এলাকা থেকে মোরশেদ খান ওরফে কামালকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্য মতে ওই দিন সামিউল শেখকে কোটালীপাড়া থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ওই শুক্রবার সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার দুই আসামীকে আদালতে হাজির করলে তারা স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি দেয়।
গ্রেপ্তারকৃত ওই দুই আসামীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থাকার অপরাধে অপর আসামীকে সনাক্ত করে ১৪ মার্চ শওকত ভূইয়া নামের অপর আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। মামলা তদন্তের স্বার্থে আপাতত অপর দুই আসামীর নাম উল্লেখ করা যাচ্ছে না বলে জানান পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান।
তিনি আরো জানান, আসামীরা ঘটনার তিন-চার দিন আগে পরিকল্পা করে পল মজুমদারের ঘর থেকে টাকা ও স্বর্ণালংকার চুরি করবে। ঘটনার দিন ঘরে প্রবেশ করলে পল মজুমদার ছেলে পিয়াস মজুমদারকে তাদের দেখে ফেলে। তখন পিয়াসকে হাত-পা ও মুখ বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে টাকা ও রুপা অলংকার নিয়ে যায়। এ ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে শওকত ভূইয়ার নামে বিভিন্ন থানায় ১১টি চুরির মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত ওই তিন আসামীর নিকট থেকে ২৪ হাজার ১শ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) কাজী মাহবুবুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ সরোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সালেহ আহমেদ, সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর মো. সাজেদুর রহমান, কোটালীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কালাম আজাদ সহ জেলায় বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।