1. b71newstv@gmail.com : Moshiur Rahman : Moshiur Rahman
  2. jmitsolution24@gmail.com : support :
শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫, ০৭:৪২ পূর্বাহ্ন

কুড়িগ্রামে চেয়ারম্যানদের নানা অনিয়মে ফেরত যাচ্ছে ইজিপিপি প্রকল্পের সোয়া ১৬ কোটি টাকা

রুহুল আমিন রুকু কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি
  • Update Time : শুক্রবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
  • ৪৪৩ Time View

কুড়িগ্রামের উলিপুরে টাকার বিনিময়ে সুবিধাভোগিদের নামের তালিকা করা নিয়ে জটিলতায় এবারও ফেরত যাচ্ছে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসুচি (ইজিপিপি) প্রকল্পের প্রায় সোয়া ১৬ কোটি টাকা। প্রকল্পের নীতিমালা লংঘন করে পুরোনো তালিকাভূক্ত সুবিধাভোগিদের বাদ দিয়ে ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে নতুনদের অর্ন্তভুক্ত করার অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে। নীতিমালার সাথে সাংঘষিক এ তালিকা নিয়ে চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে জটিলতায় প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও তালিকা অনুমোদন হয়নি। ফলে ওই প্রকল্পের সুবিধাভোগি ৫ হাজার ৭১ জন অতিদরিদ্র মানুষ তাদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশংকায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।

উপজেলা প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে উপজেলার অতিদরিদ্রদের জন কর্মসংস্থান কর্মসুচীর (ইজিপিপি) কাজ এক যোগে শুরু করার জন্য নন-ওয়েজ খাতে বরাদ্দ প্রদান করেন। প্রথম ও ২য় পর্যায়ে ৫ হাজার ৭১ জনের জন্য ১৬ কোটি ২২ লাখ ৭২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া দেন। কর্মসুচি বাস্তবায়নের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর গত ১৩ নভেম্বর/২২ চিঠি দিয়ে নীতিমালা অনুযায়ী পুরাতন সুবিধাভোগিদের বহাল রেখে যারা মৃত্যু, বয়স্ক, অক্ষম ও স্থান্তরিত হয়েছে তাদের নাম বাদ দিয়ে ওই পরিবার থেকে প্রতিস্থাপন করে তালিকা পাঠানো ও ২৬ নভেম্বর/২২ থেকে কর্মসুচির কাজ শুরু করার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ মোতাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস প্রকল্পর নির্দেশিকা অনুযায়ী গত বছরের সুবিধাভোগিদের নাম ঠিক রেখে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তালিকা চেয়ে চেয়ারম্যানদের চিঠি দেন। কিন্ত চেয়ারম্যানরা প্রকল্পের নীতিমালা লংঘন করে গত বছরের সুবিধাভোগিদের অর্ধেক নাম বাদ দিয়ে নতুন সুবিধাভোগির নাম অর্ন্তভুক্ত করে নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তালিকা জমা দেন। ফলে ওই তালিকা নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও চেয়ারম্যানদের মধ্যে জটিলতা শুরু হয়। চেয়ারম্যানদের দেয়া তালিকা প্রকল্প নীতিমালার সাথে সাংঘষিক হওয়ায় উপজেলা পরিষদ তা অনুমোদর করেনি। গত ২২ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওই তালিকা জেলা প্রশাসক বরারবর প্রেরণ করে মতামত ও সিদ্ধান্ত চান। জেলা প্রশাসক গত ২২ জানুয়ারী ইউপি চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে এ নিয়ে বৈঠক করে তালিকা সংশোধন করার নির্দেশ দেন। তালিকা সংশোধন না হতেই গত ২৫ জানুয়ারী প্রকল্পের প্রথম ফেজের কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ফলে টাকা ফেরত যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
সাহেবের আলগা ইউনিয়নের গোলামের চরের বাসিন্দা খৈইমুদ্দিনের স্ত্রী মর্জিনা বেগম ও আবু বক্করের স্ত্রী বিলকিছ বেগম আগে থেকে ওই প্রকল্পে কাজ করছেন। তাদের কাছে মেম্বার টাকা দাবী করে না পেয়ে তাদের তালিকা থেকে নাম বাদ দেয়া হয়েছে।

দুর্গাপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম সাঈদ বলেন, মেম্বাররা টাকা নিয়েছে। আমাকেও অনেকে মন খুশি করে দিয়েছে। কারো কাছে দাবী করে নেইনি।
থেতরাই ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান জানান, কর্মী খুশি রাখতে তাদেরও দেওয়া কয়েকটি নাম তালিকায় দেয়া হয়। তারা কিছু টাকা পয়সা নিয়েছে। এখন শুনছি নতুন নাম সব বাদ যাবে। মেয়াদ শেষ হওয়ায় তিনি প্রকল্প নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন।
সাহেবের আলগা ইউপি চেয়ারম্যান মোজাফ্ফর হোসেন জানান, কেউ কেউ টাকা নিয়েছে শুনেছি। কিন্তু আমার কিছু করার নাই। আমি পুরাতনদের মধ্যে ১৫ ভাগ বাদ দিয়ে নতুন নাম তালিকা করে জমা দিয়েছি। এখন সব বাদ দিয়ে তালিকা চেয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ও শেষ এখন কি হবে জানি না। বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের পুরাতন তালিকাভুক্ত শ্রমিক, পাবন আলী, হযরত আলী, ডাক্তার, কাশেম, দেওয়ান আলী, সোহরাব আলী, জোনাব আলী, হোসেন আলী সহ অনেকে জানিয়েছেন গত রমজান মাসে ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নজরুল ইসলামের অনুমতি ক্রমে ২০ দিন এ কর্মসূচির আওতায় পোরার চর গ্রামের রাস্তার কাজ করি প্রায় এক বছর হলেও আমরা শ্রমিকের টাকা এ পর্যন্ত পাইনি। চেয়ারম্যান মেম্বাররা দেই দেবো বলে জানান। তাছাড়াও উক্ত ইউপি মেম্বার নজরুল ইসলাম গত ১০ দিন আগে উদ্বোধন কর্তৃপক্ষ ম্যানেজ করতে শ্রমিকদের কাছ থেকে ২০০ শত উৎকোচ বাবদ গ্রহণ করেন বলে শ্রমিকরা জানিয়েছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সিরাজুদ্দৌলা জানান, উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি ইউনিয়নের তালিকা পেয়েছি। প্রকল্পের নীতিমালার বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নাই। সময় শেষ হলে ও আমরা চেষ্টা করছি টাকা আটকানোর জন্য। গরীব এলাকার মানুষ উপকৃত হবে। চেয়ারম্যানদের নীতিমালার পরিপন্থি তালিকা করায় এ জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। নাম তালিকা করতে টাকা নেয়ার বিষয়ে জানান এমন অভিযোগ পেয়েছি। তিনি আরো বলেন, প্রকল্পটির কর্ম দিবস বর্তমানে ৪০ দিন। আগামী বছর কর্ম দিবস হবে ১২০ দিন। কিন্তু এই জটিলতার কারণে প্রকল্প নিয়ে সংশয় রয়েছে। প্রথম ফেজের কাজের মেয়াদ ২৫ জানুয়ারি শেষ হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার শোভন রাংসা বলেন, তালিকা সংশোধন করে প্রকল্প রক্ষার চেষ্টা করছি। টাকা নেয়ার বিষয়ে তিনি কোন লিখিত অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।

উল্লেখ্য, গত বছরও ভাগাভাগির দ্বন্দ্বে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান (ইজিপিপি) পাইলট প্রকল্পের সোয়া ১৬ কোটি টাকা ফেরত গেছে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category