কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার সুইচগেট নামক বাজারে গভীর রাতের অগ্নিকান্ডে ৯’টি টিনসেট দোকান ঘর, নগদ টাকাসহ প্রায় ৬০ লক্ষাধীক টাকার মালামাল পোড়ে ছাঁই হয়েছে। শুক্রবার দিবাগত রাত আনুমানিক ৩ টায় এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে। পরের দিন ২৪ জুন (শনিবার) উলিপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সৃষ্ট এ অগ্নিকাণ্ড’য় ক্ষতিগ্রস্ত ৯ দোকানী তাদের রুজির একমাত্র সম্বল আগুণে পোড়ে ভুষ্মিভুত হওয়ায় তারা এখন নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছে বলে জানাযায়। তবে, আগুনের সূত্রপাত কি ভাবে হয়েছে, সে ব্যাপারে কেউ নিশ্চিৎ করে পারেনি। অনেকে ধারনা করছে, কেউ হয়তো শত্রুতা মূলক এ আগুণ ধরিয়ে দিয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে।
জানাগেছে, উপজেলার দক্ষীণ দলদলিয়ায় অবস্থিত উক্ত সুইচগেট বাজারের জায়গা-জমির মালিকানা অংশ নিয়ে ঐ এলাকার নূরল হক সরকারের ৫ পুত্র যথাক্রমে চাঁদ মিয়,আঃ মালেক ও আঃ মান্নান গংদের মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে দ্বন্দ্ব চালে আসছিলো। ইতিপূর্বে প্রায় ২ মাস আগেও একই দোকান ঘরে অগ্নি সংযোগ চেষ্টার অভিযোগে আঃ মান্নানকে সন্ধেহ করা হয়েছিলো। এনিয়ে এলাকায় একাধিকবার মিটিং-বৈঠক করা হলেও তাতে কোনো সুরাহা হয়নি। বরং একে অপরকে দোষারোপ করে আসছিলো। এমতাবস্তায় ঘটনার দিন-ক্ষণ গত ২৩ জুন/২০২৩ইং শুক্রবার দিবাগত রাত আনুমানিক ৩ টায় পূর্বের মত একই স্থানে পেট্রোল দিয়ে আগুণ ধরিয়ে দেয় দূর্বিত্তরা। ঐ বাজারে দায়িত্বরত নৈশ্য প্রহরী বাবলু মিয়া ও শাহালম হোসেন জানান, এ সময় তারা শব্দ শুনে দূর্বীত্তের পিছু ধাওয়া করতে না করতেই দেখতে পান, নিমির্ষেই পেট্রোলে আগুণ প্রজ্জ্বলিত হয়ে পরেছে এবং প্রায় এক’শ ফিট উঁচুতে উঠেছে সেই আগুণের লেলিহান শিখা। এলাকাবাসী ছুটে এসেও আগুণ নিভাতে পারেননি। পরে খবর পেয়ে, উলিপুর ফায়ার সার্ভিস’র একটি গাড়ী ঘটনার ৪৫ মিনিট পর ঘটনাস্থলে পৌঁছে । তবে, ইতিমধ্যে ঐ বাজারের ১টি হার্ডওয়ারের দোকান, ১টি কাপরের দোকান,২টি গোলামালের দোকান, ২টি হোটেল, ১টি কম্পিউটারের দোকান, ১টি কসমেটিকের দোকান ও ১টি সুতলির গোডাউনসহ প্রায় ৬০ লক্ষাধীক টাকার মালামাল পোড়ে আঙ্গড় হয়ে যায়। তিস্তা নদীর উপকণ্ঠে অবস্থিত ঐ বাজারের অধিকাংশ দোকানদার নদী ভাংগনের শিকার ও অভাবী পরিবার। তাদের বর্তমান রুজি-রোজগারের একমাত্র সম্বল সেই দোকান টুকুনও আজ পুড়ে দিয়েছে। তারা এখন নিঃস্ব হয়ে পরেছে। এমনি এক দোকানী ওমর ফরুক জানান, “খুব ছোট বয়সে বাবা-মায়ের বাড়ী-ঘর, বাস্তুভিটা-মাটি তিস্তা নদীতে ভেঙ্গে যাওয়ায় অন্যের আশ্রয়ে থেকে ছোট বেলা থেকে মানুষের বাড়ীতে কাজ করে, ঢাকা খেটে কয়টাকা ক্যাশ করে দোকান ঘর ভারা নিয়ে এর উপর রুজি করে কোনমতে জীবন চালিয়ে আসছি। আজ সেটুকুও শেষ। কাল কি খাবো সেই দানাটুকুও ঘরে নেই। এর উপর আবার ঋণের কিস্তির চাপ আছে। এখন ঢাকা খাটা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।” একই ভাবে পথে বসেছে মোস্তাফিজার, সাজু মিয়া, উজ্জ্বল,শফিকুল, সাহেব আলী ও আঃ জলিল। তারা এই ধ্বংসাত্বক কর্মকাণ্ড ও নাশকতাকারীকে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি এবং ক্ষতি পুরন আদায়ের দাবী জানিয়েছেন।
এদিকে, বিবাদমান মালিকানার উভয় পক্ষ পরস্পর পরস্পরকে দোষারপ করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা জন্য পরিকল্পিত ভাবে এঘটনা তারাই ঘটিয়েছেন বলে জানান। এক পক্ষ আঃ মান্নান বলেন, “ঐ মার্কেটের সব থেকে বড় দোকানটি আমার। এবং সব থেকে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি আমি। কেউ কোনো দিন নিজের দোকানে আগুণ ধরে দেয়?” বরং যারা এর আগে কেরোসিন দিয়ে পোড়তে চেয়েছিলো, তাতে না পেরে আজ তারাই পেট্রোল দিয়ে আগুণ ধরিয়ে দিয়েছে।” তবে, কে সেই ব্যক্তি তার নাম প্রকাশ করেননি। ###