1. b71newstv@gmail.com : Moshiur Rahman : Moshiur Rahman
  2. jmitsolution24@gmail.com : support :
শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫, ০১:৫৭ পূর্বাহ্ন

কুড়িগ্রামে টুপিতে নকশা তুলে নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি রপ্তানি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য

রুহুল আমিন রুকু কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি
  • Update Time : বুধবার, ২০ মার্চ, ২০২৪
  • ৪১৬ Time View

কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত গ্রামের নারীদের হাতে তৈরি টুপি সুনাম কুড়িয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। বাহারি রঙের সুতায় বিভিন্ন ডিজাইনে বানানো টুপির চাহিদা বেড়েই চলেছে দিনদিন। এই টুপি তৈরি করে এখানকার হাজারো নারীদের হয়েছে কর্মসংস্থান, সংসারে ফিরেছে স্বচ্ছলতা।

তবে এমন আয় আর সুনামের গল্পের পেছনের মূল উদ্যোক্তা মোর্শেদা বেগমকে পাড়ি দিতে হয়েছে অনেকটা পথ। বেকার নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করায় নারীদের আইকন হিসেবে পরিচিত তিনি। মোর্শেদা বেগম কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার পাতিলাপুর গ্রামের বাসিন্দা। নিপুণ হস্তশিল্প সম্ভার নামে টুপি তৈরির প্রতিষ্ঠানের পরিচালক তিনি।
জানা গেছে, মোর্শেদা বেগম যখন দশম শ্রেণির ছাত্রী, তখন তার বিয়ে হয়। সংসারে অভাব থাকায় ১৯৯৫ সালে বিয়ের পর স্বামী জাবেদ আলীর সঙ্গে চলে যান টাঙ্গাইলে। সেখানে একটি টাওয়াল ফ্যাক্টরিতে কাজ নেন। ভাড়া বাসার পাশে পরিচয় হয় মোছা. কমলা বেগমের সঙ্গে। কমলা বেগমের টুপি তৈরির কাজ দেখে দেখে রপ্ত করেন মোর্শেদা। দিনে ফ্যাক্টরির কাজ আর রাতে টুপি বানানো শুরু করেন তিনি। প্রথম টুপি তৈরি করে মজুরি পান ৩৫০ টাকা। পরে তার নিখুঁত কাজ দেখে মুগ্ধ হন এক বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা। প্রথম অর্ডারে ৫০টি টুপি তৈরি করে পেয়েছিলেন ১৭ হাজার টাকা।
এরপর মোর্শেদা বেগম গ্রামে ফিরে আসেন। প্রথমে এলাকার ৭ জন নারীকে নিয়ে শুরু করেন দারিদ্র্য জয়ের সংগ্রাম। তার সফলতার গল্প শুনে দলে দলে অন্য নারীরাও টুপি বানানোর কাজে ছুটে আসেন। বর্তমানে তার সঙ্গে ৫ হাজার নারী কাজ করছেন। মোর্শেদা বেগম শুধু নিজগ্রাম পাতিলাপুরের নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেননি আশপাশের প্রায় ৪০-৫০টি গ্রামের নারীদের কর্মসংস্থান তৈরি করেছেন তিনি। বিভিন্ন বয়সী নারীর পাশাপাশি পুরুষরাও একাজ করে সংসারের আয় যোগাচ্ছেন।
মোর্শেদা জানান, ফেনীর দুজন ব্যবসায়ীর কাছে তিনি তৈরি টুপি বিক্রি করেন। আর এই টুপি মধ্যপ্রাচ্যের বাহরাইন, সৌদি আরব, দুবাইয়ে বিক্রি হয়। ওই ব্যবসায়ীরা তার কাছে রেশমা (নকশা আঁকা কাপড়) সরবরাহ করেন। এরপর তিনি নারীদের সঙ্গে নিয়ে স্রেফ সুঁই সুতা দিয়ে তৈরি করেন নানা ধরনের নকশাখচিত টুপি। টুপি তৈরি দেখভাল করতে বিভিন্ন গ্রামে বেতনভুক্ত প্রায় ১৫ জন সুপারভাইজার রেখেছেন। হাতে বানানো প্রতিটি টুপি তৈরির জন্য নারীরা পারিশ্রমিক পান ৮০০-১৬০০ টাকা। এতে সুই সুতার খরচ ১৪০-১৫০ টাকা। প্রতি টুপিতে তিনি কমিশন পান ৭০- ৯০ টাকা। প্রতি মাসে ৮-১০ হাজার টুপি বিক্রি করেন তিনি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে টুপি তৈরির পরিধি আরও বাড়াতে পারবেন বলে জানান তিনি।
পাতিলাপুর গ্রামের হাওয়া বেগম জানান, চার বছর আগে মোর্শেদা বেগমের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে টুপি তৈরির কাজ শুরু করেন। এখন তার আর অভাব নেই। সংসারের স্বাভাবিক কাজের পাশাপাশি টুপি তৈরি করে ভালো আয় করছেন তিনি।
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোছা. মুক্তা খাতুন বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি আমি মোর্শেদা আন্টির টুপি তৈরির কাজ করি। এখান থেকে যা উপার্জন করি লেখাপড়ার খরচ মিটিয়ে বাবাকে সহযোগিতা করতে পারি। শুধু আমি না, আমার মতো বিভিন্ন বয়সের নারীরা এখানে কাজ করে ভালো টাকা পাচ্ছেন।
সাত দরগাহ গ্রামের মৌসুমি বলেন, সারা বছর আমরা টুপি তৈরির কাজ করি। বিশেষ করে রমজান মাস ও কোরবানি ঈদের সময় টুপির চাহিদা বেশি থাকে। এ সময় টুপি বানিয়ে জনপ্রতি ৮-১০ হাজার টাকা পাই। কয়েক বছর ধরে পরিবার নিয়ে খুব সুন্দর ঈদ কাটাতে পারছি।
কুড়িগ্রাম ক্ষুদ্র কুটিরশিল্প বিসিকের উপব্যবস্থাপক শাহ মোহাম্মদ জোনায়েদ বলেন, পাতিলাপুর গ্রামের নারী উদ্যোক্তা মোর্শেদা বেগমের টুপি মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছে, এটি কুড়িগ্রাম জেলার জন্য ভালো খবর। হাজার হাজার নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন তিনি। সরকারি কোনো প্রশিক্ষণ, আর্থিক ঋণ অথবা তৈরি টুপি বাজারজাতকরণে কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে কুড়িগ্রাম বিসিক মোর্শেদা বেগমকে সহযোগিতা করবে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category