1. b71newstv@gmail.com : Moshiur Rahman : Moshiur Rahman
  2. jmitsolution24@gmail.com : support :
বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫, ১০:১৪ অপরাহ্ন

একটি মরণ ফাঁদ, গুম হওয়া লাশ আর নির্ঘুম রাতের গল্পের মধ্য দিয়ে ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে গোপালগঞ্জ পুলিশ

কে এম সাইফুর রহমান গোপালগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
  • ৩৮৫ Time View

 

গ্রামের দরিদ্র মৎস্যজীবী মনু বৈরাগী (ছদ্ম নাম)। গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের চান্দার বিল সংলগ্ন কলিগ্রাম খ্রীস্টান পল্লীতে নিভৃত জীবন যাপন তার। অপুষ্টির শরীরে হার্নিয়ার বড় অপারেশনের পর দূর্বল ও অসুস্থ হয়ে গত ছয় মাস অলস ঘরে বসে ছিলো মনু। কিন্তু বেঁচে থাকলেই মানুষের পেটের দায় থাকবে; থাকবে ক্ষুধার যন্ত্রণা! নামে বৈরাগী হলেও সংসারের খাদ্য যোগান দিতে হিমশিম খাওয়া বৈরাগীর বৈরাগ্য করার সুযোগ কোথায়? তাই, বড়শীর সুতা হাতে সন্ধ্যাবেলায় জীবিকার তাগিদে বেরিয়ে পড়েন তিনি। এদিকে বাড়িতে তার স্ত্রী সন্তানের অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়; রাত গভীর হয়ে শেষে সকাল হয়; কিন্তু তাদের নির্ঘুম চোখে মনু বৈরাগীর দেখা মিলে না! এ সময় তার পরিবার আশংকায় নিমজ্জিত; ভয়ে অভিভূত; মাছের আশা, মাছ বিক্রি করা টাকার আশা দূরীভূত হয়ে ততক্ষনে আশা কেবল একটাই- “কখন ঘরে ফিরে আসবে মনু বৈরাগী??” কাকে বললে, কাকে ধরলে বাবাকে পাওয়া যাবে? মনুর সন্তান কারো মাঝে নির্ভরতা পায় না!

ঘটনার দ্বিতীয় দিনে মনু বৈরাগীর নিরুদ্দেশ হবার খবর কলিগ্রামের সে খ্রীষ্টান পল্লী হতে এক কান দু কান হয়ে পৌঁছে যায় পুলিশের কানে। গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর থানার অফিসার ইন চার্জ সংবাদ পেয়ে পুলিশ সুপার গোপালগঞ্জ মহোদয়ের নির্দেশনা নিয়ে জিডি করে একটি পুলিশ টিম সহ তদন্তে নামে। এলাকায় ও মনুর বাড়ির আশেপাশের জনগণের সাথে কথা বলে পুলিশের টিম পৌঁছে যায় চান্দার বিল এলাকায়। বিস্তীর্ন এলাকায় প্রকৃতির কোল জুড়ে থাকা এ বিলে-ই মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত নিখোঁজ মনু। পুলিশের টিম তাই বিলের বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। হন্য হয়ে খুঁজে না পেয়ে পুলিশ এলাকার জনগণের সাথে, জনপ্রতিনিধিদের সাথেও কথা বলে। পুলিশ জানতে চেষ্টা করে কারো সাথে শত্রুতা ছিল কি না। এর মধ্যে মনুর ছেলে খুঁজে খুঁজে গিয়ে হাজির হয় আরেক মৎস্যজীবী রানু বৈরাগীর (ছদ্ম নাম) বাড়িতে। সেখানে সে একটি পাতিলের মধ্যে তার বাবার মোবাইল ও ব্যবহৃত জিনিসপত্র দেখে হতচকিত হয়; সে আবার জিজ্ঞেস করে উঠে, “বাবার মালামাল এখানে, বাবা কোথায়?” রানু বৈরাগীর মুখ হতে এ প্রশ্নের কোন সদুত্তর মিলে না। সে আমতা আমতা স্বরে কুড়িয়ে পেয়ে নিয়ে এসেছে মর্মে উত্তর দিয়ে শেষ করে।

এদিকে রানু বৈরাগী যে মাছ ধরার সময় মনুর সাথে গিয়েছিল তা জানতে পেরে পুলিশ রানু বৈরাগীর সাথে কথা বলতে চায়। কিন্তু এর মধ্যে হঠাৎ রানু এলাকা ছাড়া হয়, গা ঢাকা দেয়। তবে কি রানুই হত্যা করেছে মনুকে? নাকি মাছ ধরার সহযোগী হওয়ায় শুধুই ভয়ে পালিয়ে গেছে রানু? এসব প্রশ্ন মনে রেখে পুলিশ ফিরে যায় সে বিস্তীর্ন চান্দার বিলে। ঘুরে ঘুরে এবার পুলিশ আবার ক্লান্ত, শ্রান্ত। এসময় বিশাল বিলের এক ধারে পুলিশের নজরে আসে নরম কাদা মাটিতে রোপন করা ইরি ধানের জমিতে বেশ কিছু পায়ের ছাপ। সাথে ধানের ক্ষেতের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা গুনোর চিকন ধাতব তার। এসব আলামত বিশ্লেষণ করে তারা জানতে পারে যে জনৈক সুবোধ দাসের (ছদ্ম নাম) ধানক্ষেতে এই ভয়ংকর ইঁদুর মারার ফাঁদ পাতা ছিলো। ইতোমধ্যে প্রযুক্তি হতে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায় সুবোধ দাস এলাকা থেকে পালিয়ে বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়াচ্ছে ঘটনার পর হতেই!!

এবার দুয়ে দুয়ে চার মেলায় পুলিশের দলটি; তাই সুবোধ দাসকে খুঁজে পেতে মরিয়া হয়ে যায় পুলিশ।
ইতোমধ্যে এলাকায় চাঞ্চল্যর সৃষ্টি হয়। তদন্তে যুক্ত হয় এএসপি মুকসুদপুর সার্কেল ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক্রাইম, গোপালগঞ্জ। পুলিশ সুপার গোপালগঞ্জ তদন্ত আরো জোড়দার করেন। অতপর অফিসার ইন চার্জ মুকসুদপুর এর নেতৃত্বে গত রাতে একটি আভিযানিক দল খুলনার জিরো পয়েন্ট হতে সুবোধ দাসকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসে। পুলিশ সুপার গোপালগঞ্জ নিজে উপস্থিত থেকে সুবোধ দাসকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে এক পর্যায়ে সে স্বীকার করে যে তার জমিতেই ভয়ংকর সে বৈদ্যুতিক ফাঁদে মারা যায় মনু বৈরাগী। তাই নিজেকে বাঁচাতে সে রানু বৈরাগীর সহযোগিতা নিয়ে লাশটি গভীর বিলে সুকৌশলে কচুরিপানার নিচে গুম করে পালিয়ে যায়। পুলিশ সুপার তৎক্ষনাৎ এএসপি মুকসুদপুর সার্কেল এর নেতৃত্বে ওসি মুকসুদপুর সহ একটি টিম গঠন করে দেন। গত রাত অর্থাৎ ১ ফেব্রুয়ারি রাত ৩:৩০ মিনিটে সুবোধ দাসের দেখানো মতে আভিযানিক দলটি চান্দার বিলের দুর্জোধনের জোড়া পুকুরের গভীরতম স্থান হতে নিঁখোজ মনু বৈরাগীর অর্ধগলিত ফুলে ওঠা লাশ খুঁজে বের করে থানায় নিয়ে আসে। ইতোমধ্যে ভিক্টিমের সন্তানের আবেদনের প্রেক্ষিতে মুকসুদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং অন্যান্য আইনি প্রক্রিয়া চলমান আছে।

ঘটনাস্থল: গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর থানার জলিরপাড় ইউনিয়নের কলিগ্রাম সংলগ্ন চান্দার বিল এলাকা।

গণমাধ্যমকে উপরিউক্ত তথ্য দিয়ে সহায়তা করেন গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) মো.মোহাইমিনুল ইসলাম।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category