গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (গোবিপ্রবি) যথাযোগ্য মর্যাদায় জুলাই শহীদ দিবস-২০২৫ পালন করা হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে বুধবার (১৬ জুলাই) জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা, বৃক্ষরোপণ, আলোচনা সভা, মসজিদে দোয়া মাহফিল ও মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।
এদিন বেলা ১১টায় একাডেমিক ভবনের ৫০১ নং কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার শুরুতেই জুলাই শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর বলেন, জুলাই আন্দোলন প্রকট আকার ধারণ করে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মেধাবী ছাত্র আবু সাঈদের আত্মাহুতির মধ্যদিয়ে। তার এই আত্মত্যাগ এতোটাই বিস্ফোরণ ঘটায় যে, ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলনেই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটে। এতো ত্যাগ-তিতিক্ষার পর যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, আমরা যদি জুলাইয়ের চেতনাকে ধারণ করতে না পারি, তাহলে সুযোগটাকে কাজে লাগানো সম্ভব হবে না। তাই সব রকমের রাজনীতি ভুলে, সকল ষড়যন্ত্র দূরে ঠেলে একত্রিত হয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান উপাচার্য।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সোহেল হাসান বলেন, ফ্যাসিজম কায়েম করে আওয়ামী লীগ যে অত্যাচার করেছে, নির্বিচারে গুলি করে যেভাবে পাখির মতো মানুষ হত্যা করেছে, তাদের বিচার হতেই হবে। তাদের যে অপরাধ, সমস্ত ঘৃণা জানালেও মাফ হয়ে যাবে না। এই বাংলার মাটিতে তাদের অবশ্যই বিচার হওয়া উচিত। কারণ তারা আমাদের ছাত্রদের ফিরিয়ে দিতে পারবে না। যাদের হাত-পা কেটে ফেলতে হয়ে, দুচোখ অন্ধ হয়ে গেছে, তারাও তো অনেকটা মৃত। তাদের বেঁচে থেকে আর কী লাভ! সেকারণে আমরা ফ্যাস্টিস্ট কিংবা ফ্যাসিস্টের দোসরদের ক্ষমা করতে পারি না।
এছাড়াও বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুল আহসান বলেন, আমরা এখানে সুস্থভাবে দাঁড়িয়ে আছি, কথা বলছি, তা ফ্যাসিস্ট সরকার, ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন না হলে সম্ভব হতো না। সাধারণ মানুষের মাঝে দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছে জুলাই মাসে। হয়তো এই জুলাই অনেক লম্বা হতে পারতো, তাই ৩৬ জুলাই বলা হয়। জুলাই ফুরিয়ে যাবার নয়। জুলাইয়ের চেতনাকে ধারণ করে দেশ গড়ার প্রত্যয়ে আমাদের সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।
সভায় মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, একটি সিস্টেমের পতনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখাটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর ও বর্তমান প্রশাসন যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ স্বাভাবিক রেখেছেন, গণঅভ্যুত্থানের পর ছাত্রদের পড়ার টেবিলে ফিরিয়েছেন, তার সত্যি প্রশংসনীয়। সেজন্য আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও উদ্যাপন কমিটির সভাপতি ড. মোহাম্মদ আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মজনুর রশিদের সঞ্চালনায় সভায় আরো বক্তৃতা করেন মানবিকী অনুষদের ডিন আব্দুর রহমান, রেজিস্ট্রার মো. এনামউজ্জামান, প্রক্টর ড. আরিফুজ্জামান রাজীব, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সভাপতি মাহাবুবা উদ্দিন ও অফিসার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী মনিরুল হাসান।
এ সময় বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও বিভাগীয় সভাপতি, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও জুলাই শহীদদের আত্মার মাগফেরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনায় বাদ যোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া মাহফিল এবং বিকেলে মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় জুলাই শহীদ দিবস পালনের অংশ হিসেবে ক্যাম্পাস চত্বরে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: সোহেল হাসান ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুল আহসান।