পোকার আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বোরো ধান। এর প্রতিকার ও পরামর্শ পেতেএকজন প্রবীণ কৃষক পোকা আক্রান্ত এক গুচ্ছ ধান নিয়ে উপস্থিত হন কৃষি কর্মকর্তার দপ্তরে।

কিন্তু ওই কৃষকের সমস্যার সমাধান না দিয়ে কৃষি কর্মকর্তারা তাকে অফিস থেকে গালমন্দ করে বের করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সৃষ্ট ঘটনার খবর সংগ্রহে গেলে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথেও ওই নারী কৃষি কমকর্তা রাজিয়া তরফদার অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) দুপুরে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন জেলা কৃষি কর্মকর্তা।

শিবালয় উপজেলার উথলী ইউনিয়নের গহেরপুর গ্রামের কৃষক ফজলুর রহমান জানান, তিনি এবছর ষাট শতাংশ জমিতে বোরো আবাদ করেছিলেন। কিন্তু কিছুদিন ধরে পোকার আক্রমণে কচি ধান মরে যাচ্ছে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠে থেকে কৃষি ও কৃষকদের সুবিধা-অসুবিধা দেখার কথা থাকলেও তারা মাঠে যান না। তাই তিনি এক গুচ্ছ ধান হাতে নিয়ে উপজেলা কৃষি অফিসে পরামর্শের জন্য এসে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সালাউদ্দিন সুজনকে বিষয়টি জানান।
কৃষক ফজলুর রহমান এসময় ক্ষতিগ্রস্ত ধানের ছবি তুলে রাখার জন্য তাদের পরামর্শ দেন এবং জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের মোবাইল নম্বরটা চান। এতে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেন ওই কৃষি কর্মকর্তা।

ফজলুর রহমানের সাথে খারাপ আচরণ করে বলেন, ‘আমি কি আপনার কামলা দেই? আপনি কি দেশের প্রেসিডেন্ট হয়ে গেছেন? আপনি বললেই মাঠে যেতে হবে? যা পারেন আপনি করেন। এখান থেকে বেরিয়ে যান। যদি বয়স্ক লোক না হতেন তাহলে আপনাকে দেখে দিতাম।
এসময় উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তার সাথে যোগ দেন অফিসের অন্য স্টাফরাও। এক পর্যায়ে কৃষক ফজলুর রহমানকে অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয়। চোঁখের পানি মুছতে মুছতে অফিস থেকে বের হয়ে যান ফজলুর রহমান।
উপজেলা চত্বরে ওই কৃষক এ ঘটনা দুই সাংবাদিককে জানান।

গণমাধ্যম কর্মীরা ফজলুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে পুনরায় কৃষি অফিসে যান। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিয়া তরফদারের কক্ষে গিয়ে সাংবাদিকরা কৃষকের এই অভিযোগের বিষয়টি জানান। এসময় সাংবাদিকদের সামনেই রাজিয়া তরফদার ওই কৃষকের সাথে ধমকের স্বরে কথা বলেন এবং আচরণ ঠিক হয়নি বলে তার দিকেই অভিযোগ তুলেন এবং ইংরেজীতে নানা বুলি আওরান। সাংবাদিকরা এর প্রতিবাদ করলে তিনি তাদের ওপরও চড়াও হন এবং অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।

কৃষকের অভিযোগের বিষয়ে জানতে কৃষি কমকর্তা রাজিয়া তরফদারের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

বিশ্বস্থ সূত্র জানায়, সার ব্যবস্থাপনায় ত্রুটিসহ নানাবিধ অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে এই কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

ঘটনাটি জানার পর এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বেলাল হোসেন। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন।

মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রবিআহ নূর আহমেদ জানান, কৃষি অফিসের দায়িত্বই হচ্ছে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে কাজ করা। সেখানে কৃষকের অভিযোগের প্রতিকার না করে অফিসের বাইরে বের করে দেওয়ার ঘটনা খুবই দুঃখজনক।বিষয়টি তদন্ত করে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তিনি আরো জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের বোরো খেত দেখতে বুধবার ঘটনাস্থলে জেলা থেকে কর্মকর্তা পাঠানো হবে।